সালাতে নিষিদ্ধ দৃষ্টি দুই প্রকার,চোখের দৃষ্টি। উভয় প্রকারের দৃষ্টি নাজায়েজ।

সালাতে নিষিদ্ধ দৃষ্টি দুই প্রকার

প্রথমত: আল্লাহ তা’আলা হতে গায়রুল্লাহর দিকে হৃদয়ের দৃষ্টি।

দ্বিতীয়ত: চোখের দৃষ্টি। উভয় প্রকারের দৃষ্টি নাজায়েজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন –

لَا يَزَالُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ مُقْبِلًا عَلَى الْعَبْدِ وَهُوَ فِي صَلَاتِهِ مَا لَمْ يَلْتَفِتْ فَإِذَا الْتَفَتَ انْصَرَفَ عَنْهُ.

সালাতের মধ্যে বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত এদিক সেদিক না তাকায়, ততক্ষণ পর্যন্ত মহান আল্লাহর দৃষ্টি তার দিকে থাকে (বা আল্লাহ তার সামনেই থাকেন)। পক্ষান্তরে যখন সে এদিক সেদিক তাকায়, তখন মহান আল্লাহ তার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন। 

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে সালাতে এদিক সেদিক তাকানো সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন -هُوَ اخْتِلَاسُ يَخْتَلِسُهُ الشَّيْطَانُ مِنْ صَلَاةِ الْعَبْدِ.(তিরমিজি: ২৮৬৩, নাসায়ী ১১৯৫, আবু দাউদ: ৯০৯ আবু দাউদ: ৯০৯)

এটা এক ধরণের ছিনতাই, যার মাধ্যমে শয়তান বান্দার সালাত হতে অংশ বিশেষ ছিনিয়ে নেয়।অন্য হাদিসে আছে, বান্দা যখন এদিক সেদিক তাকায় আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার থেকে উত্তম কিসে তুমি দৃষ্টি দিচ্ছো, মনোযোগ দিচ্ছো? 

যে ব্যক্তি সালাতে চোখ কিংবা অন্তর দিয়ে

যে ব্যক্তি সালাতে চোখ কিংবা অন্তর দিয়ে এদিক সেদিক তাকায় তার উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মত যাকে সুলতান বা রাজা ডেকে নিজের সামনে দাঁড় করালেন এবং তাকে সম্বোধন করে কথা বলতে লাগলেন আর সে তখন একবার ডানে, একবার বামে তাকাচ্ছে, অথবা সুলতান হতে অমনোযোগী। ফলে সে বুঝে না তাকে কি বলা হচ্ছে কেননা তার অন্তর তার সাথে নেই। এ ব্যক্তির সাথে সুলতান কেমন আচরণ করবে বলে তোমার ধারণা?। কমপক্ষে এটা অবশ্যই করবেন যে, তার উপর রাগান্বিত হয়ে তাকে দূরে সরিয়ে দিবেন এবং সুলতানের চোখে তার কোনো গুরুত্বই থাকবেনা।

সুতরাং এ ধরণের সালাত আদায়কারী এবং হুজুরে কূলব ও আল্লাহমুখী হয়ে সালাত আদায়কারীর (যে কার সামনে দাঁড়াচ্ছে তাঁর বড়ত্ব হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে। ফলে তার হৃদয় ভক্তি শ্রদ্ধায় ভরে যায়, তার গর্দান নত হয়ে যায়, সে মহান রব হতে অন্য দিকে দৃষ্টি বা মনোযোগ দেয়া হতে লজ্জাবোধ করে।) সালাত সমান নয়। তাদের দু’জনের সালাতের মাঝে এমন ভিন্নতা রয়েছে যেমন হাসসান ইবনে আতিয়্যাহ বলেন, নিশ্চয়ই দুই ব্যক্তি একই সালাতে থাকেন কিন্তু মর্যাদায় তাদের দু’জনের পার্থক্য তেমন আসমান ও জমিনের পার্থক্য যেমন।

এটা এজন্য একজন হৃদয় দিয়ে আল্লাহমুখী হয়ে সালাত আদায় করছে আর অন্যজন উদাসীন ও গাফেল হয়ে সালাত আদায় করছে।* বুখারি: ৭৫১, ৩২৯৮১ নাসায়ী: ১১৯৯, বাজ্জার কাশফুল আসতার। ১/২৬৭, হযরত জাবের রা এর হাদিস ইবনুল মোবারক আয যুহুদ: ২৪

বান্দা যখন তার মত কোনো মাখলুকের কাছে গমন করতে চায় তখন তাদের উভয়ের মাঝে কোনো পর্দা থাকলে তার কাছে গমন করতে পারেনা, ঘনিষ্ঠ হতেও পারেনা। আর বান্দা যখন তার মহান খালেক আল্লাহমুখী হতে চায়, আর তার মাঝে আর তার রবের মাঝে প্রবৃত্তি ও কুমন্ত্রণার পর্দা থাকে, নফসও এতেই আসক্ত থাকে এবং তাকে মোহাচ্ছন্ন রাখে বিবিধ চিন্তা ও কুমন্ত্রণায়। তাহলে এটি কিভাবে আল্লাহমুখীতা হবে??

বান্দা যখন সালাতে দাঁড়ায়

বান্দা যখন সালাতে দাঁড়ায় শয়তান ঈর্ষান্বিত হয়। কেননা সে সর্বোচ্চ স্থানে দাঁড়িয়েছে। যা শয়তানের জন্য ক্রোধ ও কষ্টের বিষয়। ফলে সে সকল প্রকারের চেষ্টা প্রচেষ্টা করে যাতে সে সালাতে দাঁড়াতে না পারে। বরং সে সর্বদাই তাকে প্রতিশ্রুতি দেয়, মিথ্যা আশা দেয়, তাকে ভুলিয়ে দেয়, তার উপর তার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দিয়ে আক্রমন করে। এমনকি বান্দা সালাতের গুরুত্বকে অবমূল্যায়ন মনে করে এবং সালাত ছেড়ে দেয়।

যদি শয়তান এমনটি করতে সক্ষম না হয় এবং বান্দা তার বিরোধীতা করে সালাতে দাঁড়ায়। শয়তান তার দিকে অগ্রসর হয় তার মাঝে ও তার নফসের মাঝে উদয় হয় এবং তার মাঝে ও তার অন্তরের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়। তাকে স্মরণ করায় যা সে সালাতের পূর্বে স্মরণ করেনি। এমনকি বান্দা কখনো তার কোনো প্রয়োজন ভুলে যায়, তা হতে নিরাশ হয়ে যায়, শয়তান তাকে সে বিষয় স্মরণ করায়। যাতে তার দিল এতে ব্যস্ত হয়ে যায় এবং আল্লাহমুখী হতে না পারে। ফলে বান্দা সালাতে দাঁড়ায় কিন্তু তার আত্মা উপস্থিত থাকেনা এবং আল্লাহর দয়া, রহমত, নৈকট্য কিছুই লাভ করেনা। যা লাভ করে আল্লাহমুখী হয়ে হুজুরে জ্বালবের সাথে সালাত আদায়কারী। সুতরাং সে সালাত শেষ করে ঐ অবস্থায় যে অবস্থায় সে সালাতে প্রবেশ করেছে। তার গুনাহ ও অপরাধের বোঝা এ সালাত দ্বারা একটুও হালকা হয়না।

বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবাদের তালিকা

নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি হক আদায় করে সালাত আদায় করে,

নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি হক আদায় করে সালাত আদায় করে, পূর্ণ খুশু অর্জন করে, এবং আল্লাহর সামনে মন-দিল দিয়ে দাঁড়ায়। তার সালাত তার গুনাহকে মুছে দেয়, সে সালাত শেষ করে হালকা অনুভব করে। সে অনুমান করে তার গুনাহের বোঝা হালকা হয়ে গেছে, সে শান্তি ও সজীবতা পায়। এমনকি সে কামনা করে যদি সে সালাত হতে বের না হতো। কেননা এ সালাত তার চোখের শীতলতা, তার আত্মার শান্তি, হৃদয়ের জান্নাত, তার দুনিয়ার সুখের জায়গা। সুতরাং সালাতে প্রবেশের আগে সে যেন কারাগারে ও সংকটে ছিল। সালাতের দ্বারা সে শান্তি লাভ করলো।আল্লাহ প্রেমিকগণ বলেন-

نُصَلِّي فَنَسْتَرِيحُ بِصَلَاتِنَا . 

আমরা সালাত আদায় করি আর সালাতের মাধ্যমেই শান্তি পাই। যেমনটি তাদের ইমাম, তাদের আদর্শ, তাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেন-

 يَا بِلَالُ أَرِحْنَا بِالصَّلَاةِ .

 হে বেলাল! সালাতের মাধ্যমে আমাদের প্রশান্তি দাও। রাসূল সালাত হতে শান্তি দাও বলেননি। ৩৭ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেন –

 وَجُعِلَتْ قُرَّةُ عَيْنِي فِي الصَّلَاةِ. 

এবং সালাতে নিহিত রাখা হয়েছে আমার চোখের শীতলতা। ৩৮ সুতরাং যার চোখের শীতলতা সালাতে, সালাত ছাড়া কিভাবে তার চোখ প্রশান্তি পাবে? সালাত ছাড়া কিভাবে সে থাকতে পারে? যার হুজুরে জ্বলব বা হৃদয় উপস্থিত থাকে তার সালাত উপরে উঠে। এবং যার সালাত নয়ন শীতলকারী। এটিই তার জন্য আলো ও দলিল হবে। এমনকি এটিকে দয়াময় আল্লাহ তা’আলার সম্মুখে রাখা হয় (আবু দাউদ: ৪৯৮৫, নাসায়ী: ৩৯৪২, মিশকাত: ৫২৬১, সহীহ জামে’ আস-সগীর: ৩১২৪)

ফলে সালাত বলে, আল্লাহ তোমার হেফাযত করুন যেমন তুমি আমার হেফাযত করলে।

আর সালাতের আরকান, আহকাম ও খুশু নষ্টকারীর সালাতকে পুরাতন কাপড়ের মতো পেঁচিয়ে তার মুখে নিক্ষেপ করা হয়। আর সালাত বলে, আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন যেমন তুমি আমাকে ধ্বংস করেছ।

অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يَرْفَعُهُ أَنَّهُ قَالَ: «مَا مِنْ مُؤْمِنٍ يُتِمُّ الوُضُوءَ إِلَى أَمَاكِنِهِ ثُمَّ يَقُوْمُ إِلَى الصَّلَاةِ فِي وَقْتِهَا فَيُؤَدِّيْهَا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ لَمْ يَنْقُصْ مِنْ وَقْتِهَا وَرُكُوْعِهَا وَسُجُودِهَا وَمَعَالِمِهَا شَيْئًا إِلَّا رُفِعَتْ لَهُ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ بَيْضَاءَ مُسْفِرَةً يَسْتَضِيءُ بِنُوْرِهَا مَا بَيْنَ الخَافِقَيْنِ حَتَّى يَنْتَهِيَ بِهَا إِلَى الرَّحْمَنِ عَزَّ وَجَلَّ. وَمَنْ قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ فَلَمْ يُكْمِلْ وَضُوْءَهَا وَأَخَّرَهَا عَنْ وَقْتِهَا وَاسْتَرَقَ رُكُوْعَهَا وَسُجُودَهَا وَمَعَالِمَهَا رُفِعَتْ عَنْهُ سَوْدَاءَ مُظْلِمَةً ثُمَّ لَا تُجَاوِزُشَعَرَ رَأْسِهِ تَقُولُ: ضَيَّعَكَ اللَّهُ كَمَا ضَيَّعْتَنِي

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যদি কোনো মু’মিন পূর্ণরুপে অজু করে যথাসময়ে সালাতে দাঁড়ায়। আল্লাহ তা’আলার জন্যেই সালাত আদায় করে। সালাতের সময়, রুকু, সেজদা ও বৈশিষ্ট্যে কোনো কমতি করেনা। তবে একে আল্লাহ তা’আলার নিকট উঠানো হয় সাদা আলোকোজ্জল হিসেবে। যার আলোতে আলোকিত হয় দুই দিগন্তের সব কিছুই, এমনকি তা

١٢٩١٠) عن أخرجه الطيالسي (٥٨٦)، والبزار (١٥١٠١٤٠/٧) ، والشاشي في ” مسنده ” (۱۲۹۱,۱۲۹۰) وغيرهم ع

عبادة بن الصامت رضي الله عنه مرفوعاً. قال الهيثمي في “المجمع” ١٢٢/٢)

আল্লাহ তা’আলা পর্যন্ত পৌঁছে। আর যে সালাতে দাঁড়ায় ঠিকমতো অজু করেনা, সময়মত আদায় করেনা, রুকু সিজদা ও বৈশিষ্ট্যে কমতি করে, তাহলে এটিকে উঠানো হয় কালো ও অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থায়। অতঃপর সালাত তার মাথার চুল অতিক্রম করার পূর্বেই বলে, আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন যেমন তুমি আমাকে ধ্বংস করেছ।

সুতরাং কবুল সালাত ও কবুল আমল হচ্ছে তা যা রবের জন্য উপযুক্ত। সালাত যখন মহান রবের জন্য যথাযথ হবে তখন তা কবুল হবে।

সালাতুল হাজত নামাযের দুআ ও নিয়ম
ইসলামে মিথ্যা বলা একটি গুরুতর গুনাহ (পাপ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *