অভাব অনটন দূর হওয়ার ৫আমল: ইস্তেগফার, জাকাত, আত্মীয়তা, দোয়া ও অল্পে তুষ্ট থাকা

অভাব-অনটন দূর হওয়ার আমল

অভাব অনটন দূর হওয়ার ৫আমল: বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা, জাকাত আদায় করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, বিশেষ দোয়া করা, এবং অল্পে তুষ্ট থাকা—এসব আমল জীবনে শান্তি ও রিজিকের বরকত আনে।

ইসলামে অভাব-অনটন ও সংকট দূর করার জন্য বিভিন্ন আমলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নিম্নে পাঁচটি কার্যকর আমল উল্লেখ করা হলো, যেগুলো অভাব ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তির জন্য সহায়ক হতে পারে:

১. বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা

ইস্তেগফার (তাওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা) অভাব-অনটন দূর করার অন্যতম একটি উপায়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইস্তেগফারের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন:

আয়াত:
“فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيُمْدِدْكُم بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا”
(সুরা নূহ: ১০-১২)

বাংলা অনুবাদ:
“তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো;” নিশ্চয়ই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। “তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন,.. ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দিয়ে শক্তি যোগাবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা সৃষ্টি করবেন ও নদী-নালা প্রবাহিত করবেন।”

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইস্তেগফার পাঠ করলে রিজিকের দরজা খুলে যায়, অভাব দূর হয়, আর্থিক সমৃদ্ধি ও শান্তি লাভ হয়।

২. জাকাত আদায় করা

জাকাত আদায় করা শুধু ধনীদের ওপর ফরজ নয়, বরং এটি সম্পদকে বিশুদ্ধ করে, অভাবকে দূর করে এবং দারিদ্র্য দূর করার অন্যতম উপায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:

আয়াত:
“خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا”
(সুরা আত-তাওবা: ১০৩)

বাংলা অনুবাদ:
“তাদেড় সম্পদ থেকে সাদকা (“জাকাত)গ্রহণ কর, “যার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশুদ্ধ করবে।”

জাকাত আদায় করলে সম্পদ বাড়ে এবং সমাজে অভাবী ও দরিদ্র মানুষের সহায়তা হয়, যা আর্থিক ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম মাধ্যম।

৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা (সিলাতুর রাহিম) রিজিক বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। হাদিসে এসেছে:

হাদিস:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তি রিজিকের প্রশস্ততা ও আয়ুর দীর্ঘতা কামনা করে, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।”
(সহিহ বুখারি: ৫৯৮৫)

আত্মীয়দের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা শুধু ব্যক্তির জীবনে শান্তি আনে না, বরং আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের কারণ হয়। এটি রিজিক বৃদ্ধির একটি সুন্দর মাধ্যম।

জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্বজামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব

৪. দোয়ার আমল

অভাব-অনটন দূর করার জন্য বিশেষ কিছু দোয়া রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের এমন কিছু দোয়া শিখিয়েছেন, যা পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা দারিদ্র্য দূর করে দেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হলো:

হাদিস:
“اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ”

উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজান, ওয়া আউযু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসল, ওয়া আউযু বিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখল, ওয়া আউযু বিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।”

বাংলা অনুবাদ:
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অক্ষমতা ও আলসেমি থেকে, কাপুরুষতা ও কৃপণতা থেকে এবং ঋণের ভার ও মানুষের অত্যাচার থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
(সহিহ বুখারি: ৬৩৬৯)

এই দোয়া পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা রিজিকের সংকীর্ণতা ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেন।

৫. অল্পে তুষ্ট থাকা

অল্পে তুষ্ট থাকা এবং আল্লাহর দেওয়া রিজিকে সন্তুষ্ট হওয়া অভাব-অনটন দূর করার একটি মানসিক উপায়। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

হাদিস:
“কেউ ততক্ষণ প্রকৃত ধনী হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্তরে তুষ্টি লাভ না করে।”
(সহিহ মুসলিম: ১০৫১)

অল্পে তুষ্ট থাকা মানুষকে আল্লাহর দেওয়া রিজিকে সন্তুষ্ট থাকতে শেখায়, যা মনকে শান্ত রাখে এবং অভাবের চিন্তা দূর করে।



উপরের ৫টি আমল অভাব-অনটন দূর করার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এসব আমল করার তাওফিক দান করুন এবং অভাব-অনটন থেকে মুক্তি দিন।

ইসলামে শহীদ তিন প্রকারইসলামে শহীদ তিন প্রকার
ফিলিস্তিনি ইতিহাসফিলিস্তিনি ইতিহাস, ৩০০ শতাব্দী থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *