প্রিয়নবী সা. যেভাবে দোয়া করতে পছন্দ করতেন

প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দোয়া করতে পছন্দ করতেন অত্যন্ত বিনয়, একাগ্রতা, এবং আন্তরিকতার সঙ্গে। তাঁর দোয়া করার কিছু বৈশিষ্ট্য এবং প্রিয় দোয়াগুলো নিম্নরূপ:

১. আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান দিয়ে শুরু:

নবী (সা.) দোয়া করার আগে সর্বপ্রথম আল্লাহর প্রশংসা করতেন এবং আল্লাহর গুণাবলী বর্ণনা করতেন। যেমন:

  • “আলহামদুলিল্লাহ” (সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য),
  • “আল্লাহু আকবার” (আল্লাহ মহান)।

২. আল্লাহর কাছে বিনয়ের সঙ্গে চাওয়া:

নবী (সা.) দোয়ায় অত্যন্ত বিনয়ী হতেন। তিনি সবসময় আল্লাহর দরবারে নিজেকে বিনয়ের সাথে পেশ করতেন এবং আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করতেন। তিনি বলতেন:

  • “হে আল্লাহ! আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন, তাই আমাকে ক্ষমা করুন।”
    (তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫১৩)

৩. বারবার দোয়া করা:

নবী (সা.) দোয়া করার সময় বিষয়টি আল্লাহর কাছে বারবার পুনরাবৃত্তি করতেন এবং দৃঢ় বিশ্বাস রাখতেন যে আল্লাহ তা কবুল করবেন। তিনি কখনো হতাশ হতেন না, বরং দোয়া কবুল হওয়ার জন্য ধৈর্য ধারণ করতেন।

৪. উঠতি এবং শুয়ে থাকা অবস্থায় দোয়া করা:

নবী (সা.) সব সময় এবং বিভিন্ন অবস্থানে দোয়া করতেন। উক্তি থেকে জানা যায় তিনি জেগে থাকার সময়, নামাজের মধ্যে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে, এবং বিভিন্ন সময় দোয়া করতেন:

  • “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জীবন দিয়েছেন, আবার আমার প্রাণ আপনি নেবেন এবং পুনরুত্থান দিবসে আপনি আমাকে পুনরায় জীবিত করবেন।”
    (বুখারি, হাদিস নং ৬৩২৪)

৫. দোয়ার আগে এবং পরে দরুদ পাঠ করা:

নবী (সা.) যখন দোয়া করতেন, তখন আগে ও পরে তাঁর ওপর দরুদ (দরুদ ইব্রাহিম) পাঠ করতেন। এটি দোয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।

  • “হে আল্লাহ! আমাদের নবী মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবারের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইব্রাহিম (আ.) এর ওপর রহমত বর্ষণ করেছেন।”
    (বুখারি, হাদিস নং ৩৩৭০)

৬. বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রিয় দোয়া:

নবী (সা.) বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রিয় দোয়া করতেন। কিছু দোয়া হলো:

  • তাহাজ্জুদের দোয়া:
    “হে আল্লাহ! আপনি আমার রব, আমি আপনার বান্দা, আপনারই ইবাদত করি এবং আপনি ছাড়া আর কারো ইবাদত করি না।”
    (মুসলিম, হাদিস নং ৭৭১)
  • মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়ার দোয়া:
    “হে আল্লাহ! আমাকে আমার দীন, দুনিয়া, এবং আখিরাতের ফেতনা থেকে রক্ষা করুন।”
    (তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫৩২)

৭. সাধারণ ও সহজ ভাষায় দোয়া করা:

নবী (সা.) জটিল শব্দ বা বাক্য ব্যবহার না করে সহজ ভাষায় দোয়া করতেন। তিনি আল্লাহর কাছে সরাসরি তাঁর প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো উপস্থাপন করতেন এবং নির্দিষ্ট প্রয়োজন নিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন।

৮. বিশ্বজনীন দোয়া:

নবী (সা.) কেবল নিজের জন্য নয়, বরং সমগ্র উম্মাহর জন্য দোয়া করতেন। তাঁর দোয়া ছিল সকল মুসলিমের জন্য কল্যাণ কামনা:

  • “হে আল্লাহ! আমার উম্মাহকে ক্ষমা করুন, তাদের ওপর রহম করুন।”
    (আহমাদ, হাদিস নং ১২৫৯৮)

প্রিয় নবী (সা.) দোয়া করতেন অত্যন্ত খুশু, খুজু, এবং বিনম্রতার সাথে। আল্লাহর প্রতি গভীর ভক্তি ও বিশ্বাসের সাথে তিনি দোয়া করতেন এবং আল্লাহর ক্ষমা, রহমত, ও বরকত কামনা করতেন। তাঁর দোয়া করার পদ্ধতি মুসলিম উম্মাহর জন্য আদর্শ।

আরও পড়ুন

ওযরগ্রস্ত ,অসুস্থ ব্যক্তি ও মুসাফিরের জন্য নামাজের বিধান
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুনাগুন ও উপকারিতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *