ওযরগ্রস্ত ,অসুস্থ ব্যক্তি ও মুসাফিরের জন্য নামাজের বিধান

ওযরগ্রস্ত, অসুস্থ ব্যক্তি ও মুসাফিরের জন্য নামাজের বিধান ইসলামে বিশেষভাবে সহজ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইসলামের নামাজের বিধি-বিধান এমনভাবে নির্ধারণ করেছেন যাতে সব ধরনের পরিস্থিতিতে মুসলিমরা নামাজ আদায় করতে পারে, তবে তাদের জন্য কিছু ছাড় ও সুবিধা রয়েছে। এই সংক্রান্ত বিধান ও হাদিসের রেফারেন্স সহ আরবিতে উল্লেখ করা হলো:

১. ওযরগ্রস্ত ব্যক্তি (যে ব্যক্তি কোনো বিশেষ শারীরিক অবস্থার জন্য নামাজ সঠিকভাবে আদায় করতে পারে না):

ওযরগ্রস্ত বা বিশেষ শারীরিক সমস্যা নিয়ে যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করতে সমস্যায় পড়ে, তার জন্য ইসলাম সহজ করে দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

القرآن:
“فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ”
“তোমরা তোমাদের সাধ্য অনুযায়ী আল্লাহকে ভয় করো।”
سورة التغابن (64:16)

এটি বোঝায় যে একজন ব্যক্তি তার শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী নামাজ আদায় করতে পারেন। যদি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে না পারেন, তবে বসে আদায় করবেন। যদি বসেও না পারেন, তবে শুয়ে আদায় করবেন।

হাদিস:
“رسول الله صلى الله عليه. وسلم قال: صَلِّ قَائِمًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ”
“তুমি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করো,. যদি না পারো তবে বসে, আর যদি না. পারো তবে শুয়ে আদায় করো।”
صحيح البخاري، حديث: 1117

২. অসুস্থ ব্যক্তির নামাজ:

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য ইসলাম নামাজ আদায়ে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে না পারলে, তিনি বসে বা শুয়ে ইশারায় নামাজ আদায় করতে পারেন।

القرآن:
“لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا”
“আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কিছু দেন না।”
سورة البقرة (2:286)

হাদিস:
“كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي فِي مَرَضِهِ جَالِسًا”
“রাসূলুল্লাহ “(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “তার অসুস্থতার সময় বসে বসে নামাজ আদায় করতেন।”
صحيح البخاري، حديث: 1115

৩. মুসাফিরের নামাজ:

মুসাফিরের জন্য নামাজ সহজ করে দেয়া হয়েছে। সফরে থাকা অবস্থায় ৪ রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ ২ রাকাত করে আদায় করার অনুমতি রয়েছে। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা।

القرآن:
“وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ”
“আর যখন তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কড়, তখন নামাজ সংক্ষিপ্ত করতে তোমাদের কোনো দোষ নেই।”
سورة النساء (4:101)

হাদিস:
“كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا ارْتَحَلَ قَبْلَ أَنْ تَزِيغَ الشَّمْسُ أَخَّرَ الظُّهْرَ إِلَى وَقْتِ الْعَصْرِ”
“রাসূলুল্লাহ “(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)” যখন ভ্রমণে যেতেন, তিনি যোহর নামাজ বিলম্ব করে আসরের সময়ে পড়তেন।”
صحيح البخاري، حديث: 1114

৪. মুসাফিরের নামাজ সংক্ষেপণ (কসর):

মুসাফিরকে ৪ রাকাত বিশিষ্ট নামাজ ২ রাকাত করে পড়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এটি ইসলামের সহজতা প্রদর্শন করে।

হাদিস:
“كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي فِي السَّفَرِ رَكْعَتَيْنِ”
“রাসূলুল্লাহ “(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “সফরে ২ রাকাত নামাজ পড়তেন।”
صحيح مسلم، حديث: 686

উপরোক্ত কুরআন ও হাদিসের আলোকে বোঝা যায় যে, ইসলামে ওযরগ্রস্ত, অসুস্থ ব্যক্তি এবং মুসাফিরদের জন্য নামাজ আদায়ে বিশেষ সুবিধা ও সহজতার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে তারা তাদের অবস্থান ও পরিস্থিতি অনুযায়ী ইবাদত করতে পারেন।ইজ

নামাজ/হাদিস
মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুর আগের নসিহতগুলি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *