ইসলামে শহীদ তিন প্রকার

ইসলামে শহীদ তিন প্রকার। হাদিসের ভিত্তিতে শহীদের এই শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে। তারা হল:

আখিরাতের শহীদ (আল-শহীদ ফি আল-আখিরা) বলতে সেই ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি পরকালে শহীদের মর্যাদা লাভ করবেন। যদিও তিনি ইসলামের জন্য সরাসরি যুদ্ধে শহীদ না হয়ে স্বাভাবিক বা বিশেষ কিছু কারণে মৃত্যুবরণ করেন, তবুও পরকালে তিনি শহীদের মর্যাদা পাবেন। এ ধরনের শহীদের মৃত্যু ইসলামে আলাদা মর্যাদা ও প্রতিদান নিয়ে আসে। হাদিসে এদের বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।

নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিসের রেফারেন্স দেয়া হলো যা আখিরাতের শহীদদের বিষয় বর্ণনা করে:

১. সাহিহ মুসলিম ১৯১৫:

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “পাঁচ প্রকার মৃত্যু শহীদের মর্যাদা এনে দেয়: প্লেগে মৃত্যু, পেটে কোনো রোগে মৃত্যু, পানিতে ডুবে মৃত্যু, ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যু এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে গিয়ে মৃত্যু।”

এই হাদিস অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তি এই ধরনের মৃত্যু বরণ করেন, তারা আখিরাতে শহীদের মর্যাদা পাবেন।

২. সাহিহ বুখারি ২৮২৯:

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: “পানি ডুবে মারা যাওয়া, আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া, ধ্বংসাবশেষে চাপা পড়ে মারা যাওয়া, এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মারা যায় তারা সবাই শহীদ।”

এখানে দেখা যায়, ইসলামে শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণদান করা ব্যক্তিই নয়, বরং বিভিন্ন বিপর্যয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিদেরও আখিরাতে শহীদের মর্যাদা প্রদান করা হবে।

৩. তিরমিজি ১০৬৩:

হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি প্লেগের রোগে মারা যায়, সে শহীদ। যে ব্যক্তি পেটের রোগে মারা যায়, সে শহীদ। এবং যে ব্যক্তি পানিতে ডুবে যায়, সেও শহীদ।”

এই হাদিসগুলির আলোকে বোঝা যায় যে, আখিরাতে শহীদের মর্যাদা অর্জনকারী শুধুমাত্র যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যাওয়া ব্যক্তিরাই নয়; বরং বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা রোগব্যাধির কারণে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিরাও এই মর্যাদা লাভ করতে পারেন।

আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি ইতিহাস,

দুনিয়া ও আখিরাতের শহীদ (আল-শহীদ ফি আল-দুনিয়া ওয়াল আখিরা) বলতে সেই ব্যক্তিদের বোঝানো হয়, যারা ইসলামের জন্য সরাসরি যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেন। এ ধরনের শহীদরা দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জায়গায় শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। তাদেরকে দুনিয়াতে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয় যেমন, তাদের জানাজার জন্য গোসল দেয়া হয় না, এবং তাদের রক্তাক্ত বা যুদ্ধের পোশাকে জানাজা পড়ানো হয়। আখিরাতে তারা শহীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও প্রতিদান লাভ করবেন।

দলিল ও হাদিস রেফারেন্স:

১. আল-বাকারাহ ২:১৫৪:

“আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পারো না।”

এই আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, যারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হন, তারা প্রকৃতপক্ষে জীবিত থাকেন এবং আল্লাহ তাদের জন্য পরকালে বিশেষ প্রতিদান রেখেছেন।

২. সাহিহ বুখারি ২৮১৭:

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে নিহত হয়, আল্লাহ তার সকল পাপ ক্ষমা করবেন, এবং তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে পুরস্কৃত করবেন।”

এই হাদিস থেকে জানা যায় যে, যারা আল্লাহর পথে জীবন দেন, তারা দুনিয়া এবং আখিরাতে সর্বোচ্চ মর্যাদা অর্জন করেন।

৩. সাহিহ মুসলিম ১৮৭৬:

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে নিহত ব্যক্তি শহীদ এবং তার জন্য জান্নাত নিশ্চিত। তার মৃত্যুর সময়ের যন্ত্রণাগুলো অনুভব করা হয় না।”

এই হাদিস অনুযায়ী, দুনিয়া ও আখিরাতের শহীদদের মৃত্যুর সময় বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয় এবং তারা সরাসরি জান্নাতের অধিকারী হন।

৪. তিরমিজি ১৬৬৩:

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “শহীদের রক্তের প্রথম ফোঁটা পড়ার সাথে সাথে তার সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। এবং আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।”

দুনিয়া ও আখিরাতের শহীদরা দুনিয়াতে বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান পেয়ে থাকেন। যেমন, তাদের দেহের গোসল বা অন্য কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই তাদের জানাজার নামাজ পড়ানো হয় এবং তারা সরাসরি জান্নাতে যাওয়ার অধিকারী হন।

আরও পড়ুন: আল-আকসা মসজিদের ইতিহাস

দুনিয়ার শহীদ (আল-শহীদ ফি আল-দুনিয়া) বলতে এমন ব্যক্তিদের বোঝানো হয়, যারা ইসলামের দৃষ্টিতে শহীদের মর্যাদা পান, কিন্তু পরকালে তাদের পুরোপুরি শহীদের প্রতিদান দেওয়া হয় না। তারা দুনিয়াতে শহীদের মর্যাদা লাভ করেন, তবে আখিরাতে সেই মর্যাদা সম্পূর্ণরূপে পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না। সাধারণত এরা রোগ, দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারা যান। দুনিয়ার শহীদদের জানাজার জন্য গোসল দিতে হয় এবং তাদের সাধারণ মৃতদেহের মতোই দাফন করা হয়।

দলিল ও হাদিস রেফারেন্স:

১. সাহিহ বুখারি ২৮২৯:

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “পানি ডুবে মারা যাওয়া, আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া, ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে মারা যাওয়া, এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মারা যায় তারা সবাই শহীদ।”

এই হাদিস থেকে জানা যায় যে, যারা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় মারা যান, তাদেরকে দুনিয়ার শহীদ হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে তারা আখিরাতে পূর্ণ শহীদের মর্যাদা লাভ করবেন কিনা, সে ব্যাপারে আলাদা কথা বলা হয়েছে।

২. সাহিহ মুসলিম ১৯১৫:

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “পাঁচ প্রকার মৃত্যু শহীদের মর্যাদা এনে দেয়: প্লেগে মৃত্যু, পেটে কোনো রোগে মৃত্যু, পানিতে ডুবে মৃত্যু, ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যু এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে গিয়ে মৃত্যু।”

এই হাদিসে প্লেগ বা মহামারি, পেটের রোগ, পানিতে ডুবে যাওয়া, ধ্বংসাবশেষে চাপা পড়া, ইত্যাদি অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীদের দুনিয়ার শহীদ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

৩. তিরমিজি ১০৬৩:

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি প্লেগে মারা যায়, সে শহীদ। যে ব্যক্তি পেটের রোগে মারা যায়, সে শহীদ। এবং যে ব্যক্তি পানিতে ডুবে যায়, সেও শহীদ।”

দুনিয়ার শহীদরা সাধারণত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোনো রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। যদিও তারা দুনিয়াতে শহীদের মর্যাদা পান, কিন্তু পরকালে তাদের পুরোপুরি শহীদের প্রতিদান দেওয়া হয় কিনা, তা নির্ভর করে আল্লাহর ইচ্ছার উপর। দুনিয়ার শহীদদের মর্যাদা ইসলামে সম্মানিত হলেও তাদের দাফন-পদ্ধতি সাধারণ মানুষের মতোই করা হয়।

এই তিন শ্রেণীর শহীদরা ইসলামে ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে মর্যাদা লাভ করে, যা তাদের মৃত্যুর পরিস্থিতি এবং কর্মফলের উপর নির্ভর করে।

আরও পড়ুন

নামাজ / হাদিস
জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *