আদম (আ:)-এর ইসলামে

প্রথম মানুষ, প্রথম পয়গম্বর বা নবী

নিবন্ধ: আদম

ইসলামে আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:) সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে বলা যায় যে, তাঁরা পৃথিবীর প্রথম মানব ও মানবী এবং ইসলামের মতে মানবজাতির আদি পিতা-মাতা। কুরআনে আদম (আ:)-এর সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে যে, আল্লাহ তাঁকে পৃথিবীর প্রথম নবী হিসেবে মনোনীত করেছেন এবং তাঁর পাঁজর থেকে হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন।

কুরআনের বর্ণনা:

  • আদম (আ:) প্রথম মানব, যাঁকে আল্লাহ মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।
  • তাঁর জন্য জান্নাতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তবে শয়তানের প্ররোচনায় নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার কারণে তাঁকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেওয়া হয়।
  • পৃথিবীতে আসার পর তাঁকে ও তাঁর বংশধরদের জন্য হিদায়াতের (পথনির্দেশনা) ব্যবস্থা করা হয়।

ইসলামের শিক্ষা:

  • মানবজাতির মধ্যে বিভ্রান্তি, সংঘাত বা শত্রুতা পরিহার করে ঐক্যের পথে চলার নির্দেশ দেয়।
  • আদম (আ:)-এর থেকে সমস্ত মানবজাতির সৃষ্টি হয়েছে, যা মানুষের মধ্যে সমতার ধারণা প্রতিষ্ঠা করে
নবি
ʾআদম
آدم
আদম
আলাইহিস সালাম
আদম (আ:)-এর ইসলামে
ইসলামি চারুলিপিতে লেখা আদম এবং তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক
পরিচিতির কারণপ্রথম মানুষ
দাম্পত্য সঙ্গীহাওয়া (حواء)
সন্তানহাবিল, কাবিল, শীষ
(هابيل ,قابيل, شِيث )
ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী
ছয়জন বিশিষ্ট নবীর বংশধারা
আড়াল করুনআদম (এ্যাডাম)শীষ (শেথ)নূহ (নোয়া)ইব্রাহিম (আব্রাহাম)ইসমাইল (ইশ্মায়েল)ইসহাক (আইজেক)মূসা (মোজেস)মরিয়ম (মেরি)ঈসা (যিশু)মুহাম্মাদ
বিন্দুসমৃদ্ধ রেখা একাধিক প্রজন্মকে নির্দেশ করে
দেস
প্রথম মানব ও নবী

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আদম (আ:) আল্লাহর সৃষ্ট প্রথম মানব এবং প্রথম নবী। পবিত্র কুরআনের সূরা আল-বাকারা (আয়াত ৩০) থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদের কাছে ঘোষণা করেন যে তিনি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি (খলিফা) সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন। এই ঘোষণা শুনে ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে তাদের প্রশ্ন প্রকাশ করেন।

“আর স্মরণ করুন, যখন আপনার প্রভু ফেরেশতাদের বললেন, ‘আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে যাচ্ছি।’ তাঁরা বললেন, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা আপনার গুণগান করছি এবং আপনাকে পবিত্র বলে ঘোষণা করছি।’ আল্লাহ বললেন, ‘আমি যা জানি,
(সূরা আল-বাকারা: ৩০):**

আল্লাহ আদম (আ:)-কে মাটি থেকে সৃষ্টি করেন এবং তাঁর দেহে প্রাণ সঞ্চার করেন”। এরপর আদম (আ:)-এর সঙ্গী হিসেবে হাওয়া (আ:)-কে তাঁর পাঁজরের একটি হাড় থেকে সৃষ্টি করেন”। সৃষ্টির পর তাঁদের আবাসস্থল হিসেবে বেহেশত বা জান্নাত নির্ধারণ করা হয়”। মানুষ যেহেতু আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম, তাই আল্লাহ ফেরেশতাদের আদম (আ:)-কে সিজদা করার নির্দেশ দেন। আল্লাহর এই নির্দেশ অনুসারে সব ফেরেশতা আদম (আ:)-কে সিজদা করেন, কিন্তু ইবলিস অহংকার করে এই আদেশ অমান্য করে।

কুরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে:
“আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি (খলিফা) নিযুক্ত করব।”
(সূরা আল-বাকারা: ৩০)

কুরআনে আদম (আ:)-এর নাম ১০টি সুরার মোট ৫০টি আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা আল-বাকারা, সূরা আলে ইমরান, সূরা আল-আ’রাফ, সূরা বনি ইসরাইল (সূরা ইসরা), সূরা আল-কাহফ এবং সূরা ত্বোয়া-হা’তে আদম (আ:)-এর নাম, গুণাবলী এবং কার্যাবলী বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সূরা আল-হিজর এবং সূরা ছোয়াদে শুধু তাঁর গুণাবলীর উল্লেখ রয়েছে। অন্যদিকে, সূরা আলে ইমরান, সূরা আল-মায়িদা এবং সূরা ইয়াসীনে তাঁর নাম আনুষঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

হাদিসের আলোকে:

হযরত আবূ হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন:
“আল্লাহ আদমকে সৃষ্টির সময় তাঁর উচ্চতা ছিল ৬০ কিউবিট। মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করার সময় আদম (আ:)-এর আকার লাভ করবে।”
(সহীহ বুখারি ও সহীহ মুসলিম)


কুরআনে উল্লেখ

কুরআনে আদম (আ:)-এর নাম ১০টি সুরার মোট ৫০টি আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূরা আলে ইমরান, সূরা আল-মায়িদাহ, এবং সূরা ইয়াসীন: এই সূরাগুলোতে তাঁর নাম আনুষঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূরা আল-বাকারা, সূরা আলে ইমরান, সূরা আল-আ’রাফ, সূরা ইসরা, সূরা আল-কাহফ, এবং সূরা ত্বোয়া-হা: এখানে আদম (আ:)-এর নাম, গুণাবলী এবং কার্যাবলী বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

সূরা আল-হিজর এবং সূরা ছোয়াদ: এখানে আদম (আ:)-এর কেবল গুণাবলীর উল্লেখ রয়েছে।


আদম অর্থ

আদম শব্দটি আরবি ও হিব্রু উভয় ভাষার মধ্যে বিতর্কিত। হিব্রু ভাষায় এটি “পৃথিবী” বা “মাটি” অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই ভাষায় এটি মানবজাতির প্রতীকও হতে পারে। ফিনিশ এবং সাবাই ভাষাতেও এই শব্দটি পৃথিবীর মাটি থেকে সৃষ্টিকে বোঝায়।

আরবি ভাষায়, আদম শব্দের অর্থ হতে পারে “ভূত্বকের উপরিভাগ,” কারণ আল্লাহ আদমকে পৃথিবীর উপরিভাগের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তবে একটি ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আদম শব্দের অর্থ “সংমিশ্রণ,” যেহেতু তাঁর সৃষ্টি আগুন, পানি, মাটি এবং বাতাসের সমন্বয়ে হয়েছে।

বিশেষ অর্থ:

কিছু ইসলামি পণ্ডিতের মতে, আদম শব্দটি আল্লাহর নিজের উচ্চারণ করা একটি নাম। এর একটি ব্যাখ্যা হলো:

  • “আ” মানে আমার (আল্লাহর নিজের নির্দেশ)।
  • “দম” মানে ফুঁকে দেওয়া প্রাণের বায়ু বা রুহ।

এভাবে, আদম শব্দের পূর্ণ অর্থ দাঁড়ায়:
“আল্লাহর আদেশে তাঁর নিজের রুহ থেকে ফুঁকে দেওয়া প্রাণ।”

এই ব্যাখ্যা আদম (আ:)-এর সৃষ্টির গভীর তাৎপর্য এবং তাঁর আল্লাহর সাথে বিশেষ সম্পর্কের দিকটি তুলে ধরে।


আদমের সৃষ্টি

আল্লাহ তাআলা আদম (আ:)-কে সৃষ্টি করার জন্য প্রথমে জিবরাইল (আ:) এবং মিকাইল (আ:) নামক দুই ফেরেশতাকে পৃথিবীতে পাঠান। তাঁরা মাটির আর্তি শুনে আল্লাহর কাছে ফিরে যান এবং মাটি সংগ্রহ করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর আল্লাহ আজরাইল (আ:)-কে পাঠান। আজরাইল (আ:) মাটির অনুরোধ অগ্রাহ্য করে পৃথিবীর উপরের স্তর থেকে বিভিন্ন রঙের মাটি সংগ্রহ করেন এবং তা আল্লাহর কাছে নিয়ে যান।

আল্লাহ এই মাটি দিয়ে নিজ হাতে আদম (আ:)-এর আকৃতি সৃষ্টি করেন এবং পরে এতে রুহ (প্রাণ) ফুঁকে দেন। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আদম (আ:)-এর মধ্যে জীবন সঞ্চারিত হয়। মানুষের ত্বকের রঙের ভিন্নতার একটি কারণ হলো আদম (আ:)-এর সৃষ্টি বিভিন্ন রঙের মাটি থেকে।

হাদিসের বর্ণনা:

রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন:
“আল্লাহ তাঁর নিজের অবয়বে আদমকে সৃষ্টি করেছেন।”
(সহীহ বুখারি ও সহীহ মুসলিম)

এই বিবরণ থেকে বোঝা যায়, আদম (আ:) মানবজাতির আদি পিতা এবং তাঁর সৃষ্টি আল্লাহর এক বিশেষ প্রক্রিয়া ও উদ্দেশ্যের প্রতিফলন।


আদমের সিজদাহ ও শয়তানের অনুরাগ

আল্লাহ তাআলা আদম (আ:)-কে সৃষ্টি করার পর ফেরেশতাদেরকে বললেন:
“তোমরা আদমকে সিজদা করো। কারণ আদম (আ:)-এর জ্ঞান তোমাদের জ্ঞানের চেয়ে বেশি।” (সূরা আল-বাকারা: ৩১-৩৪)

আল্লাহর এই আদেশ অনুযায়ী সব ফেরেশতা আদমকে সিজদা করলো। তবে শয়তান (ইবলিস) অহংকারের কারণে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানায়। সে বলল:
“আমি আগুন থেকে সৃষ্টি, আর আদম মাটি থেকে”। আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।” (সূরা আল-আ’রাফ: ১২)

শয়তান আল্লাহর আদেশ অমান্য করায় আল্লাহ তাকে বেহেশত থেকে বিতাড়িত করলেন এবং অভিশপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে জান্নাত থেকে বের করে দিলেন। এরপর আল্লাহ আদম (আ:) এবং তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে জান্নাতে রাখলেন এবং সেখানে সুখী জীবনযাপনের জন্য নির্দেশ দিলেন।

এই ঘটনাগুলো থেকে মানুষের মধ্যে অহংকার, আনুগত্য, এবং আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা পাওয়া যায়।


বেহেশত/স্বর্গ থেকে বিতাড়ন

সৃষ্টির পর আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:)-এর অবস্থান ছিল জান্নাতে। সেখানে আল্লাহ তাদের জন্য সবকিছু বৈধ করেছিলেন, তবে একটি নির্দিষ্ট বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় তারা নিষিদ্ধ ফল খেয়ে ফেলেন। এটি ইসলামের দৃষ্টিতে মানবজাতির প্রথম ভুল বা পদস্খলন হিসেবে উল্লেখিত। এর শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ তাদের জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন।

কুরআনের বর্ণনা:

  • “কিন্তু শয়তান তাদের পদস্খলন ঘটাল এবং তারা দু’জন যেখানে ছিল,. তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দিল। আমি বললাম, ‘.নেমে যাও,. তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু”। দুনিয়াতে কিছু কালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা আছে।’”
    (সূরা আল-বাকারা: ২:৩৬)

এরপর আদম (আ:) আল্লাহর কাছে তাওবা করেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আল্লাহ তাঁর তাওবা গ্রহণ করেন:

  • “তারপর আদম তার প্রতিপালকের নিকট হতে কিছু বাণী প্রাপ্ত হলেন,. অতঃপর আল্লাহ তার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন কড়লেন., তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল,. পরম দয়ালু।”
    (সূরা আল-বাকারা: ২:৩৭)

আল্লাহ বলেন:

  • “তোমরা সবাই এখান হতে নেমে যাও”। পরে যখন আমার নিকট থেকে তোমাদের কাছে সৎপথের নির্দেশ আসবে,. তখন যারা আমার সৎপথের অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না”। আর যারা কুফরি কড়বে ও আমার নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার করবে, তারাই জাহান্নামী;. সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।”
    (সূরা আল-বাকারা: ২:৩৮-৩৯)
  • “তোমরা দু’জন (আদম ও ইবলিস) “একই সঙ্গে নেমে যাও, তোমরা একে অপরের শত্রু”। অতঃপর আমার নিকট থেকে তোমাদের কাছে সঠিক পথের নির্দেশ আসবে,”” তখন যে আমার পথ নির্দেশ অনুসরণ করবে, “সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না।”
    (সূরা ত্ব-হা: ১২৩)

পৃথিবীতে অবতরণ:

কাসাসুল আম্বিয়া অনুসারে, আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:)-কে পৃথিবীর দুটি ভিন্ন স্থানে অবতরণ করানো হয়।

  • আদম (আ:) অবতরণ করেন শ্রীলঙ্কার আদম পাহাড়ে।
  • হাওয়া (আ:) অবতরণ করেন সৌদি আরবের হেজাজ অঞ্চলে।

দীর্ঘদিন পর, মক্কার আরাফাত প্রান্তরে তাদের পুনর্মিলন ঘটে। এই ঘটনাটি মানবজাতির পুনর্মিলন এবং নতুন করে পৃথিবীতে জীবনের সূচনার প্রতীক।


পৃথিবীর জীবন

পৃথিবীতে আগমনের পর আল্লাহ তাআলা আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:)-কে কাবাগৃহ নির্মাণের আদেশ দেন। বর্ণিত আছে যে, আদম (আ:) আল্লাহর নির্দেশে কাবা নির্মাণ করেন এবং তাদেরকে এই পবিত্র ঘর তাওয়াফ করার আদেশ দেওয়া হয়।

আদম (আ:)-এর নির্মিত কাবা:

ইসলামি ঐতিহ্যে বিশ্বাস করা হয় যে, আদম (আ:) কর্তৃক নির্মিত কাবাগৃহটি নূহ (আ:)-এর যুগে মহাপ্লাবন পর্যন্ত অক্ষত ছিল। নূহের মহাপ্লাবনের সময় এটি ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তীতে, ইবরাহিম (আ:) ও ইসমাইল (আ:) আল্লাহর নির্দেশে এই কাবাগৃহ পুনর্নির্মাণ করেন।

কাবার গুরুত্ব:

কাবা মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত পবিত্র একটি স্থান, যা তাওয়াফের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং ভক্তি প্রদর্শনের প্রতীক। এটি ইসলামি ঐতিহ্যের সঙ্গে আদম (আ:)-এর সংযোগ স্থাপন করে এবং জান্নাত থেকে পৃথিবীতে মানবজাতির আত্মার যোগসূত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।

[তথ্যসূত্রের প্রয়োজন]:


পরিবার

আল্লাহ আদম (আ:)-এর নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্য তাঁর বাম পাঁজরের হাড় থেকে হাওয়াকে সৃষ্টি করেন। হাওয়া ছিলেন আদম (আ:)-এর স্ত্রী এবং মানবজাতির প্রথম নারী। পৃথিবীতে অবতরণের পর আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:)-এর বহু সন্তান-সন্ততি জন্মগ্রহণ করেছিল।

আদম (আ:)-এর সন্তানগণ:

আলোচিত সন্তানদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:

  • হাবিল
  • কাবিল
  • আকলিমা
  • লাইউদা

তাঁদের অন্যতম সন্তান শিস (আ:) আল্লাহর একজন নবী হিসেবে মনোনীত হন। তিনি আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:)-এর পরে মানবজাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহর নির্দেশ পালন করেন।

তথ্যসূত্রের প্রয়োজন:

উল্লেখিত ঘটনাগুলোর উৎস ইসলামি বর্ণনা ও ঐতিহ্য থেকে পাওয়া গেলেও নির্ভরযোগ্য ইসলামি পাণ্ডুলিপি বা হাদিসের উল্লেখের জন্য নির্দিষ্ট সূত্র প্রয়োজন।


উপাধি

আদম (আ:)-কে “সাফিউল্লাহ” উপাধি প্রদান করা হয়, যার অর্থ হলো “আল্লাহর পছন্দ” বা “আল্লাহর নির্বাচিত”। আরবি ভাষায় এটি صفیالله (সাফিউল্লাহ) নামে পরিচিত। এই উপাধি তার প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ এবং সম্মানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আদম (আ:) ছিলেন প্রথম মানব ও প্রথম নবী। আল্লাহ তাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেন এবং তাকে পৃথিবীতে মানবজাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে নিযুক্ত করেন। সাফিউল্লাহ উপাধি তার আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও বিশুদ্ধতার কারণে প্রদত্ত একটি মহিমাময় উপাধি।


সন্তান

কুরআনে সূরা মারইয়াম (আয়াত ৫৮) তে শুধুমাত্র “আদমের সন্তান” থেকে আসা কিছু ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই আয়াতে বিশেষ করে আদম (আঃ) এবং তাঁর সন্তানদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তবে সংখ্যাগত বিশদ বর্ণনা সেখানে নেই।

তবে কিছু ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুসারে, হাওয়ার ২০ গর্ভে মোট ৪০ জন বা ১২০ গর্ভে ২৪০ জন ছেলে-মেয়ে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে আদম (আঃ) তাঁর সন্তান, নাতি-নাতনিসহ মোট ৪০,০০০ জনকে দেখে যান। এই বিবরণটি সাধারণত ইসলামী ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলির মধ্যে পাওয়া যায়, যা আধ্যাত্মিক এবং সাঙ্ঘাতিক অর্থে বিবেচিত।


ইন্তেকাল ও কবর

আদম (আঃ) তার জীবনের শেষ সময়ে নয় শত ত্রিশ, নয় শত পঞ্চাশ অথবা একহাজার বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর দিনটি ছিল শুক্রবার এবং তাঁর জানাজা তার ছেলে শেথ (আঃ) পড়ান। আতা খুরাসানী বলেন, আদম (আঃ) এর মৃত্যুর পর গোটা বিশ্ব এক সপ্তাহ শোক পালন করেছিল। ইবন ইসহাক জানান, তার মৃত্যুর পর এক সপ্তাহ ধরে চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ ছিল।

তাঁকে জাবালে কুবায়সে বা সিংহলের পাহাড়ে, যেখানে তিনি প্রথম অবতরণ করেছিলেন, অথবা বায়তুল মুকাদ্দাসে দাফন করা হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে লেখা মোজেসের অ্যাপোক্যালিপ্সে সলোমনের মন্দির (বায়তুল মুকাদ্দাস) এর বেদীকে আদম (আ:)-এর সমাধি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।


আরও দেখুন
আদম (আঃ)
মুহাম্মাদ, আল্লাহর রাসুল মদিনায় মসজিদে নববীর দরজায় খোদাই করামুহাম্মাদ, আল্লাহর রাসুল
আবু বকর (রাঃ)আবু বকর (রাঃ)
ইমাম বুখারীর নামের আরবি চারুলিপিইমাম বুখারি (রহ.)