মোনাজাতের দোয়া সমূহ

মোনাজাতের দোয়া সমূহ>মোনাজাত হলো আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা বা দোয়া করা, যেখানে মানুষ তার চাহিদা, ইচ্ছা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এটি সরাসরি আল্লাহর সাথে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলার একটি মাধ্যম। মোনাজাত করার সময় বিভিন্নভাবে আল্লাহর প্রশংসা, ক্ষমা প্রার্থনা, নিজের ও অন্যের জন্য কল্যাণ কামনা করা হয়।

মোনাজাতের কিছু আরবি ও বাংলা দোয়া:

আরবি: اللّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا،. وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلًا

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআ, ওয়া রিজকান তায়্যিবা, ওয়া আমালান মুতাকাব্বালা

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কল্যাণকর জ্ঞান, পবিত্র রিজিক এবং মাকবুল আমল প্রার্থনা করছি।”

এটি একটি সংক্ষিপ্ত দোয়া, যা দুনিয়া এবং পরকালে শান্তি ও মঙ্গল প্রার্থনা করার জন্য।

“رَبَّنَا آتِنَا” (রাব্বানা আতিনা) হলো কুরআনের একটি বিখ্যাত দোয়া, যা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা করার জন্য পড়া হয়। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ একটি দোয়া এবং বিভিন্ন ইবাদত ও মোনাজাতে পড়া হয়ে থাকে।

রাব্বানা আতিনা – আরবি ও বাংলা:

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً. وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল্ আখিড়াতি হাসানাতাঁও ওয়াকিনা আযাবান্নার
Rabbana atina fid-dunya hasanatan. wa fil-akhirati hasanatan. wa qina ‘adhab an-nar.

অর্থ: হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন, আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। (সূরা আল-বাকারা, ২:২০১)

এই দোয়া দুনিয়ার শান্তি, কল্যাণ ও আখিরাতের মুক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মুমিনদের মধ্যে এটি বহুল প্রচলিত।

“رَبَّنَا ظَلَمْنَا” (রাব্বানা যালামনা) হলো কুরআনের একটি দোয়া, যা আমাদের কৃত পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য পাঠ করা হয়। এটি হযরত আদম (আ.) এবং হাওয়া (আ.)-এর দোয়া, যখন তারা তাদের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন।

রাব্বানা যালামনা – আরবি ও বাংলা:

আরবি:

رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

উচ্চারণ: রাব্বানা যালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিড়লানা ওয়া তারহামনা লানা কূনান্না মিনাল খাসেরীন।
(“Rabbana zhalamna anfusana wa in lam taghfir lana watarhamna lanakoonanna minal-khasireen.“)

অর্থ: হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের ওপর অত্যাচার করেছি। আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা আল-আ’রাফ, ৭:২৩)

এই দোয়া মূলত আল্লাহর কাছে নিজেদের ভুল এবং পাপের স্বীকারোক্তি করে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর করুণা এবং ক্ষমার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

আল-আকসা মসজিদের ইতিহাস

মোনাজাত: রাব্বানা হাবলানা মিন

আরবি:
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

উচ্চারণ: রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজীনা ওয়া র্যুরিয়্যাতিনা কুররাতা আয়ুনিন্। ওয়াজ্ আলনা লিল মুাত্তাকীনা ইমামা।
(”Rabbana hab lana min azwajina. wa dhurriyyatina qurrata a’yunin. waj’alna lilmuttaqina imama.”)

অর্থ: “হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানদের পক্ষ থেকে আমাদের চোখের স্নিগ্ধতা দান কর, এবং আমাদেরকে মুত্তাকিদের (পরহেজগারদের) জন্য আদর্শ বানাও।”
(সূরা আল-ফুরকান, আয়াত ৭৪)

এটি এক ধরনের দোয়া, যা পরিবারে শান্তি ও সঠিক পথে পরিচালনার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা।

মোনাজাত: রাব্বানাছরিফ ‘আন্না আযাবা জাহান্নামা

আরবি:
رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا

উচ্চারণ: রাব্বানাছরিফ ‘আন্না আযাবা জাহান্নামা, ইন্না আযাবাহা কানা গারামা, ইন্নাহা সাআত মুস্তার্ক্বারাও ওয়া মুকামা।
(”Rabbana-srif ‘anna ‘adhaba jahannama inna ‘adhabaha kana gharama”)

অর্থ: “হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি দূর করুন। নিশ্চয়ই তার শাস্তি স্থায়ী দুর্ভোগ।”
(সূরা আল-ফুরকান, আয়াত ৬৫)

এই দোয়াটি জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার জন্য করা হয়।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমাদের পাপগুলোকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের জীবনে শান্তি ও কল্যাণ দান করুন। আপনি আমাদের সকল বিপদ থেকে রক্ষা করুন এবং আমাদের অন্তরকে বিশুদ্ধ করুন। আমিন।

মোনাজাতের কিছু সাধারণ দিক:

  • আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে শুরু করা।
  • ক্ষমা প্রার্থনা করা।
  • নিজের, পরিবারের ও উম্মাহর জন্য কল্যাণ ও সাহায্য কামনা করা।
  • শেষে প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা।

মোনাজাতের সময় মন থেকে আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হয় এবং দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হয় যে আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন।


দুরুদে ইব্রাহিম

আরবি:
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ وَعَلَىٰ آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا. صَلَّيْتَ عَلَىٰ. إِبْرَاهِيمَ وَعَلَىٰ آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ. مَجِيدٌ.
اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ وَعَلَىٰ آلِ. مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَعَلَىٰ آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ. حَمِيدٌ مَجِيدٌ.

উচ্চারণঃ আল্লাহুমা ছাল্লি আ’লা মুহাম্মদিওঁ ওয়া আ’লা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আ’লা ইবরাহীম ওয়া আ’লা আলি ইবরাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুমা বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ’লা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আ’লা ইবরাহীম ওয়া আ’লা আলি ইবরাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
Allahumma salli ‘ala Muhammadin wa. ‘ala aali Muhammadin, kama sallaita ‘ala Ibrahima wa. ala aali Ibrahima innaka Hamidum Majid. Allahumma barik. ‘ala Muhammadin wa. ‘ala aali Muhammadin, kama barakta. ala Ibrahima wa. ala aali Ibrahima innaka. Hamidum Majid.

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি এবং মুহাম্মাদ (সা.)-এর পরিবারবর্গের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেভাবে আপনি ইবরাহিম (আ.)-এর প্রতি এবং ইবরাহিম (আ.)-এর পরিবারবর্গের প্রতি রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয়ই, আপনি প্রশংসনীয় এবং মহিমাময়।
হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি এবং মুহাম্মাদ (সা.)-এর পরিবারবর্গের প্রতি বরকত দান করুন, যেভাবে আপনি ইবরাহিম (আ.)-এর প্রতি এবং ইবরাহিম (আ.)-এর পরিবারবর্গের প্রতি বরকত দান করেছিলেন। নিশ্চয়ই, আপনি প্রশংসনীয় এবং মহিমাময়।”

এটি সালাতে (নামাজে) তাশাহুদে বসে পড়া হয়, যা নবী মুহাম্মাদ (সা.) এবং ইবরাহিম (আ.)-এর উপর দোয়া ও আশীর্বাদ পাঠ করার জন্য।

নামাজের দোয়া সমূহ
ফরজ নামাজ ( চিত্রসহ )

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *