মসজিদে নববী

মসজিদে নববী “(আরবি: المسجد النبوي)” হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) “কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ, যা সৌদি আরবের মদিনা নগরীতে অবস্থিত”। এটি মুসলমানদের জন্য গুরুত্বের দিক থেকে মসজিদুল হারামের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত”।

হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসেন, তখন তিনি তাঁর সাহাবিদের সহযোগিতায় এই মসজিদ নির্মাণ করেন।

মসজিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর ভেতরে হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পবিত্র রওজা শরীফ। এটি মুসলিম বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও শ্রদ্ধার স্থান। এখানে গিয়ে সালাম পাঠ ও দোয়া করার মাধ্যমে মুসলমানরা আধ্যাত্মিক শান্তি লাভ করেন।

মসজিদে নববী
ٱلْـمَـسْـجِـدُ ٱلـنَّـبَـويّ‎
মসজিদে নববী
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিইসলাম
নেতৃত্বইমাম(সমূহ):
আবদুর রহমান আস-সুদাইস (দুই পবিত্র মসজিদের সভাপতি)আবদুর রহমান আল হুজায়ফী (প্রধান ইমাম)সালাহ আল বুদাইরআব্দুল বারী আওয়ায আল-সুবাইতীআবদুল মুহসিন আল-কাসিমহুসাইন আবদুল আজিজ আল-শেখআহমাদ ইবনে তালিব হামিদআবদুল্লাহ বু’য়াইজানআহমাদ আল হুজাইফীখালিদ আল মুহান্নাআব্দুল্লাহ আল কুরাফীমুহাম্মদ বারহাজীএসাম বোখারী (প্রধান মুয়াজ্জিন)
অবস্থান
অবস্থানমদিনা, হেজাজ, সৌদি আরব
প্রশাসনসৌদি আরব সরকার
স্থাপত্য
ধরনমসজিদ
স্থাপত্য শৈলীধ্রুপদি ও সাম্প্রতিক ইসলামি; উসমানীয়; মামলুক পুনরুত্থানকারী
প্রতিষ্ঠার তারিখ৬২২ খ্রিষ্টাব্দ
বিনির্দেশ
ধারণক্ষমতা৬,০০,০০০ (হজ্জের সময় এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১০,০০,০০০ হয়)
মিনার১০
মিনারের উচ্চতা১০৫ মিটার (৩৪৪ ফু)

মসজিদে নববী হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিজ বাসগৃহের পাশে নির্মিত হয়েছিল। তিনি স্বয়ং এই মসজিদের নির্মাণকাজে অংশগ্রহণ করেন এবং সাহাবিদের সাথে মিলে এর কাজ সম্পন্ন করেন। এটি সেই সময়ে শুধু নামাজের স্থান নয়, বরং মুসলিম সমাজের সম্মিলনস্থল, বিচারালয় এবং শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।

মসজিদটি ইসলামের ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন মুসলিম শাসক দ্বারা সম্প্রসারিত এবং সৌন্দর্যবর্ধিত হয়েছে। ১৯০৯ সালে এটি বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করে, কারণ এখানেই আরব উপদ্বীপে প্রথমবারের মতো বৈদ্যুতিক বাতি প্রজ্জ্বলিত হয়। এটি আধুনিক যুগে মসজিদ উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।

বর্তমানে মসজিদটি খাদেমুল হারামাইন শরিফাইনের (দুই পবিত্র মসজিদের রক্ষক) নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। এটি মদিনার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং এর ঐতিহ্যবাহী গুরুত্ব বজায় রেখে চলেছে।

হজ এবং মসজিদে নববী:
মসজিদে নববী হজযাত্রীদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ। হজ পালনের আগে বা পরে, হাজিরা মদিনায় এসে এই পবিত্র মসজিদে নামাজ আদায় করেন এবং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর রওজা শরিফে সালাম পেশ করেন। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অসীম আধ্যাত্মিকতার স্থান।

এ মসজিদে নামাজ আদায়ের ফজিলত অনেক বেশি। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
“আমার মসজিদে এক রাকাত নামাজ অন্য মসজিদে হাজার রাকাত নামাজের সমান।” (সহীহ বুখারি: ১১৯০)

মসজিদটি বর্তমানে মুসলমানদের আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক চেতনার এক অসামান্য নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

মসজিদে নববী ও সবুজ গম্বুজ: ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা

উমাইয়া খলিফা প্রথম আল-ওয়ালিদের শাসনামলে মসজিদে নববী একটি বিশাল সম্প্রসারণের অংশ হয়। এই সম্প্রসারণের সময়, মসজিদের অংশে হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং প্রথম দুই খুলাফায়ে রাশেদিন, হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এবং হযরত উমর ফারুক (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর সমাধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই ঐতিহাসিক দিকটি মসজিদে নববীর আধ্যাত্মিক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

সবুজ গম্বুজ

মসজিদের দক্ষিণপূর্ব প্রান্তে অবস্থিত সবুজ গম্বুজটি ইসলামের ইতিহাসে বিশেষভাবে পরিচিত। এটি মূলত হযরত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-এর বাড়ির স্থানে নির্মিত হয়। এখানে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তার দুই ঘনিষ্ঠ সাহাবি ও উত্তরসূরি শাসকের সমাধি রয়েছে।

১২৭৯ খ্রিষ্টাব্দে, নবীজীর কবরের উপরে একটি কাঠের গম্বুজ নির্মিত হয়। এই গম্বুজটি পরবর্তীকালে সময়ে সময়ে পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়।

  • ১৫শ শতাব্দীতে: কাঠের গম্বুজটি নতুনভাবে সাজানো হয়।
  • ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে: উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের অধীনে একটি স্থায়ী গম্বুজ নির্মাণ করা হয়।
  • ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে: গম্বুজটি প্রথমবারের মতো সবুজ রঙে রাঙানো হয়। এর পর থেকেই এটি “সবুজ গম্বুজ” নামে পরিচিত।
সবুজ গম্বুজের গুরুত্ব

সবুজ গম্বুজটি শুধু একটি স্থাপত্য নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর জন্য ভালোবাসা এবং সম্মানের প্রতীক। এখানে নবীজীর রওজা শরিফ রয়েছে, যা মুসলিমদের জন্য বিশেষ গুরুত্ববাহী।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
“যে ব্যক্তি আমার রওজা জিয়ারত করে এবং আমাকে সালাম দেয়, আমি নিজে তাকে জবাব দিই।” (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং: ২/৩৬৭)

সবুজ গম্বুজের গুরুত্ব

উসমানীয় সুলতানরা মসজিদে নববী এবং সবুজ গম্বুজের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের অধীনে এই গম্বুজটি বর্তমান রূপ পায়, যা পরবর্তীতে মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম পরিচিত নিদর্শনে পরিণত হয়।

মসজিদে নববী ও এর সবুজ গম্বুজ ইসলামের ইতিহাসের এক অপূর্ব নিদর্শন। এটি শুধুমাত্র মুসলিম উম্মাহর আধ্যাত্মিক কেন্দ্র নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন যা মুসলিম স্থাপত্য ও সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহন করে।

ইতিহাস
মসজিদে নববী
উসমানীয় যুগে মসজিদে নববী, ১৯ শতক

হযরত মুহাম্মদ (সঃ আঃ)ও রাশিদুন খিলাফত

মসজিদে নববী: নির্মাণ ও সম্প্রসারণের ঐতিহাসিক বিবরণ

নির্মাণকালীন ঘটনা

হিজরতের পর হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদিনায় এসে মসজিদে নববী নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি একটি উটে চড়ে মসজিদের জন্য নির্ধারিত স্থানে আসেন। এই জমিটি দুইজন অনাথ বালকের মালিকানায় ছিল। তারা জমিটি বিনামূল্যে উপহার দিতে চাইলেও মহানবী (সাঃ) তা গ্রহণ করেননি। বরং জমিটির মূল্য পরিশোধ করে কিনে নেন।

প্রথম মসজিদ নির্মাণে তিনি নিজেই শ্রম দেন। এই মসজিদটি ছিল খুবই সাধারণ কাঠামোর।

  • আকার: ৩০.৫ মিটার × ৩৫.৬২ মিটার
  • দেয়াল ও ছাদ: খেজুর গাছের খুটি এবং খেজুর পাতার ছাদ।
  • উচ্চতা: ৩.৬ মিটার
  • দরজা: তিনটি — দক্ষিণে বাব-আল-রহমত, পশ্চিমে বাব-আল-জিবরিল, এবং পূর্বে বাব-আল-নিসা।
খায়বারের যুদ্ধের পর সম্প্রসারণ

খায়বারের যুদ্ধের (৭ খ্রিষ্টাব্দ) পর মসজিদটি আরও সম্প্রসারণ করা হয়।

  • প্রসারিত আকার: চারপাশে ৪৭.৩২ মিটার বৃদ্ধি।
  • নতুন কাঠামো: পশ্চিম দেয়ালের পাশে তিন সারি খুটি নির্মাণ।
খুলাফায়ে রাশেদিনের সময়ে উন্নয়ন
হযরত আবু বকর (রাঃ):

প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) এর শাসনামলে মসজিদের আকার অপরিবর্তিত থাকে।

হযরত উমর (রাঃ):

দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রাঃ) মসজিদটি উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারণ করেন।

  • আশেপাশে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর স্ত্রীদের বাড়ি ছাড়া বাকিগুলো ভেঙে ফেলা হয়।
  • আকার: ৫৭.৪৯ মিটার × ৬৬.১৪ মিটার।
  • নির্মাণ সামগ্রী: মাটির ইট এবং পাথরের মেঝে।
  • উচ্চতা বৃদ্ধি: ৫.৬ মিটার।
  • নতুন দরজা: তিনটি নতুন দরজা সংযোজন।
হযরত উসমান (রাঃ):

তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রাঃ) মসজিদে নববীর পূর্ণাঙ্গ পুনর্নির্মাণ করেন।

  • নির্মাণকাল: দশ মাস।
  • আকার: ৮১.৪০ মিটার × ৬২.৫৮ মিটার।
  • দেয়াল ও খুটি: পাথরের দেয়াল ও লোহার সাথে সংযুক্ত পাথরের খুটি।
  • ছাদ: সেগুন কাঠ দিয়ে নির্মিত।
  • দরজার সংখ্যা ও নাম অপরিবর্তিত থাকে।

মসজিদে নববীর ইতিহাস এর নির্মাণ ও সম্প্রসারণের সঙ্গে মুসলিম শাসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি শুধু একটি মসজিদ নয়, বরং ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক।

উমাইয়া, আব্বাসীয় ও উসমানীয় যুগ

মসজিদে নববীর উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসনামলে সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন

উমাইয়া খলিফার সময়কার সম্প্রসারণ (৭০৭ খ্রিষ্টাব্দ)

উমাইয়া খলিফা প্রথম আল-ওয়ালিদ মসজিদে নববীর প্রথম বড় আকারের সম্প্রসারণ করেন। এই প্রকল্প সম্পন্ন করতে তিন বছর সময় লাগে।

  • প্রসারিত এলাকা:
  • পূর্বে ৫০৯৪ বর্গ মিটার ছিল যা বৃদ্ধি করে ৮৬৭২ বর্গ মিটার করা হয়।
  • মসজিদটি ট্রাপোজয়েড আকৃতির হয়ে যায় এবং এর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ১০১.৭৬ মিটার (৩৩৩.৯ ফুট)
  • কাঁচামালের উৎস:
  • নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয় বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য থেকে।
  • বাইজেন্টাইন স্থাপত্যের প্রভাব মসজিদে দেখা যায়।
  • নতুন স্থাপনা ও কাঠামো:
  • হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সমাধি ও তাঁর স্ত্রীদের আবাসস্থলকে মসজিদ থেকে পৃথক করার জন্য দেয়াল নির্মাণ করা হয়।
  • মসজিদের উত্তরে একটি বারান্দা যোগ করা হয়।
  • এ সময় চারটি মিনার নির্মিত হয়, যা মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

আব্বাসীয় খলিফার সময়কার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন
খলিফা আল মাহদির শাসনকাল

আব্বাসীয় খলিফা আল মাহদি মসজিদের উত্তর দিকে বড় আকারের সম্প্রসারণ করেন।

  • সম্প্রসারণের পর এলাকা:
  • উত্তরের দিকে ৫০ মিটার (১৬০ ফুট) মসজিদ বাড়ানো হয়।
  • নাম উৎকীর্ণ:
  • মসজিদের দেয়ালে খলিফা আল মাহদির নাম উৎকীর্ণ করা হয়।
খলিফা আল মামুন ও মুতাওয়াক্কিলের অবদান
  • আল মামুন:
  • মসজিদের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
  • আল মুতাওয়াক্কিল:
  • হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সমাধির বাইরে মার্বেল পাথর ব্যবহার করেন, যা সমাধির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
মার্বেল গম্বুজ নির্মাণ (১৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দ)
  • আল-আশরাফ কানসুহ আল-গাউরি:
  • হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সমাধির উপর একটি মার্বেল পাথরের গম্বুজ নির্মাণ করেন।
  • এই গম্বুজ পরবর্তীকালে সবুজ রঙ করা হয়, যা আজ সবুজ গম্বুজ নামে পরিচিত।


মসজিদে নববী
১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে সবুজ গম্বুজ
হযরত মুহাম্মদ (সঃ আঃ) এর সমাধি ও সবুজ গম্বুজ
  • হযরত মুহাম্মদ (সঃ আঃ) এর সমাধি মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত।
  • সমাধির উপরে অবস্থিত গম্বুজটি প্রথম নির্মাণ করা হয় ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে, উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের শাসনামলে
  • ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে গম্বুজটি সবুজ রঙ করা হয়, এবং এরপর এটি “সবুজ গম্বুজ” নামে পরিচিতি লাভ করে।

সুলতান প্রথম আবদুল মজিদের পুনর্নির্মাণ (১৮৪৯-১৮৬১)

সুলতান প্রথম আবদুল মজিদ মসজিদে নববীর পুনর্নির্মাণ শুরু করেন, যা ছিল মসজিদটির অন্যতম বৃহৎ সংস্কার প্রকল্প।

  • প্রকল্পের সময়কাল:
  • পুনর্নির্মাণে মোট ১৩ বছর সময় লেগেছিল (১৮৪৯-১৮৬১)।
  • প্রধান উপকরণ:
  • নির্মাণে লাল পাথরের ইট ব্যবহার করা হয়, যা মসজিদকে টেকসই এবং স্থায়িত্ব প্রদান করে।
  • মেঝে সম্প্রসারণ:
  • মসজিদের মেঝে ১২৯৩ বর্গ মিটার বৃদ্ধি করা হয়।
  • দেওয়ালে নকশা ও অলংকরণ:
  • মসজিদের দেয়ালে ক্যালিগ্রাফিক শৈলীতে কুরআনের আয়াত উৎকীর্ণ করা হয়।
  • এই অলংকরণ মসজিদকে আরও ঐতিহ্যবাহী এবং নান্দনিক করে তোলে।
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংযোজন:
  • মসজিদের উত্তর দিকে একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করা হয়, যেখানে কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

মসজিদে নববীর ইতিহাসে সুলতান আবদুল মজিদের পুনর্নির্মাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সংস্কার মসজিদের স্থাপত্যে নতুন মাত্রা যোগ করে এবং এটি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।


সৌদি যুগ

আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের শাসন ও সংস্কার
  • ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে, আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ মদিনা দখল করেন।
  • মদিনার বিভিন্ন সমাধি ও গম্বুজগুলোকে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড বন্ধের জন্য ধ্বংস করার নির্দেশ দেন।
  • তবে, সবুজ গম্বুজ অক্ষত রাখা হয়, যেটি হযরত মুহাম্মদ (সঃ আঃ)-এর সমাধির উপরে অবস্থিত।
  • সবুজ গম্বুজ মুসলিম ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে টিকে থাকে।
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দ: সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পর সংস্কার কাজ
  • মসজিদ সম্প্রসারণ এবং পুনর্গঠনের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়।
  • ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে:
  • মসজিদের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে নামাজের স্থান বাড়ানো হয়।
  • কৌণিক আর্চযুক্ত কংক্রিটের স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
  • পুরনো স্তম্ভগুলোকে কংক্রিট ও তামা দিয়ে মজবুত করা হয়।
  • মিনার পরিবর্তন: সুলাইমানিয়া এবং মাজিদিয়া মিনার মামলুক স্থাপত্য শৈলীতে প্রতিস্থাপন করা হয়।
  • উত্তরপূর্ব ও উত্তরপশ্চিমে দুটি নতুন মিনার যুক্ত করা হয়।
  • একটি গ্রন্থাগার স্থাপন করা হয়, যেখানে ঐতিহাসিক কুরআন এবং অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ সংরক্ষিত হয়।
১৯৭৪-১৯৮৫: ফয়সাল ও ফাহাদ শাসনামলে সম্প্রসারণ
  • ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ:
  • মসজিদের আয়তন ৪০,৪৪০ বর্গ মিটার বাড়ানো হয়।
  • ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ:
  • বৃহৎ সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।
  • ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে সম্প্রসারণ শেষ হলে, মসজিদের মোট আয়তন ১.৭ মিলিয়ন বর্গ ফুট দাঁড়ায়।
২০১২: ৬ বিলিয়ন ডলারের সম্প্রসারণ প্রকল্প
  • ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৃহৎ সম্প্রসারণ প্রকল্প ঘোষণা করা হয়।
  • এর লক্ষ্য ছিল ১.৬ মিলিয়ন মুসল্লি ধারণ ক্ষমতা নিশ্চিত করা।
  • ২০১৩ সালের মার্চ মাসে, সৌদি গেজেট জানায় যে, পূর্ব দিকে দশটি হোটেল এবং কিছু স্থাপনা ধ্বংস করে নতুন স্থাপনার জায়গা তৈরি করা হয়েছে।
মসজিদের পরিচালনা ও ইমামদের ভূমিকা
  • হারামাইনের বর্তমান সভাপতি:
  • শাইখ আবদুর রহমান আস-সুদাইস।
  • সহ-সভাপতি: শাইখ মুহাম্মদ বিন নাসির আল-খুজাইম।
  • ইমাম ও খতিবদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব:
  • শাইখ আলি আল হুজাইফা।
  • শাইখ আবদুল বারি আস-সুবাইতি।
  • শাইখ হুসাইন আল-শাইখ।
  • শাইখ আবদুল মুহসিন আল-কাসিম।
  • শাইখ সালাহ আল-বুদাইর।
  • শাইখ আবদুল্লাহ আল-বুয়াইজান।
  • শাইখ আহমাদ তালিব হামিদ।

মসজিদে নববীর সাম্প্রতিক ইতিহাস সৌদি আরবের নেতৃত্বে এর ব্যাপক সংস্কার ও সম্প্রসারণের গল্প বলেছে। এটি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পবিত্র স্থান এবং এর প্রতি মুসলিম উম্মাহর গভীর শ্রদ্ধার প্রতীক।


স্থাপত্য

মসজিদের গঠন ও স্তর:
মসজিদে নববী একটি দুই-স্তর বিশিষ্ট স্থাপনা এবং এটি আয়তাকার আকৃতিতে নির্মিত। উসমানীয় আমলের নামাজের স্থানটি মসজিদের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত।

গম্বুজ এবং তাদের কার্যকারিতা:

  • মসজিদের ছাদ সমতল এবং এতে ২৭টি চলাচলযোগ্য গম্বুজ রয়েছে।
  • প্রতিটি গম্বুজ বর্গাকার ভিত্তির উপর নির্মিত এবং নিচের স্থান আলোকিত করার জন্য গম্বুজগুলো সরানো যায়।
  • গম্বুজ সরিয়ে মসজিদের ভেতরে প্রাকৃতিক আলো ও ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়।
  • গম্বুজগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে প্রয়োজন অনুসারে ছায়ার জন্য সেগুলো খোলা যায়।

ছাতা ও ছায়ার ব্যবস্থা:

  • মসজিদের প্রাঙ্গণে থাকা স্তম্ভগুলোতে বিশেষ ছাতা সংযুক্ত করা হয়েছে।
  • এই ছাতাগুলো খুলে প্রাঙ্গণের নামাজিদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়।
  • মসজিদের চারপাশের বাধানো স্থানেও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
  • এই স্থানে ছাতাসদৃশ তাবু স্থাপন করা হয়েছে যা ছায়া প্রদান করে।

স্থাপত্যশৈলী ও নির্মাণ:

  • এই গম্বুজ এবং ছাতাগুলো ডিজাইন করেন জার্মান স্থপতি মাহমুদ বোদো রাশ্চ
  • তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মসজিদের এই বিশেষ স্থাপত্য নির্মাণ করা হয়।

মসজিদে নববীর স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য আধুনিক প্রযুক্তি ও ঐতিহ্যবাহী শৈলীর এক অপূর্ব সমন্বয়। এর গম্বুজ এবং ছাতার ব্যবস্থা শুধুমাত্র সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেনি, বরং মসজিদকে নামাজের জন্য আরামদায়ক পরিবেশে রূপান্তরিত করেছে।

রিয়াদুল জান্নাহ

বিশেষ স্থান:
মসজিদে নববীর ভেতরে একটি ছোট কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রয়েছে, যা রিয়াদুল জান্নাহ (جَنَّةٍ رَوْضَةٌ) বা “জান্নাতের বাগান” নামে পরিচিত। এই বিশেষ স্থানটি হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর সমাধি থেকে তার মিম্বর পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।

দোয়া ও নামাজের গুরুত্ব:
বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত হজযাত্রী এবং দর্শনার্থীরা রিয়াদুল জান্নাহতে দোয়ানামাজ আদায়ের চেষ্টা করেন।

  • বিশেষত, হজ্ব ও ওমরাহর সময় এখানে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়।
  • অনেক সময় অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে এখানে প্রবেশ করা সবসময় সম্ভব হয় না।

রিয়াদুল জান্নাহর মর্যাদা:
রিয়াদুল জান্নাহকে জান্নাতের একটি অংশ হিসেবে দেখা হয়।

  • হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, সাহাবি আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) বলেছেন:

“ما بين بيتي ومنبري روضة من رياض الجنة”
অর্থ: “আমার ঘর থেকে মিম্বর পর্যন্ত স্থানটি জান্নাতের বাগানগুলোর একটি বাগান।” (বুখারি: ১১৯৫, মুসলিম: ১৩৯১)

ধর্মীয় মাহাত্ম্য:
রিয়াদুল জান্নাহর পবিত্রতা এবং মাহাত্ম্য মুসলিমদের হৃদয়ে গভীরভাবে প্রোথিত।

  • এই স্থানটি শুধুমাত্র মসজিদে নববীর ঐতিহাসিক গুরুত্বই নয়, বরং এটি জান্নাতের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।
  • এখানে প্রার্থনা করা, দোয়া করা, এবং ইবাদতের মাধ্যমে অনেক মুসলিম জান্নাতের সান্নিধ্য লাভের অনুভূতি পান।

রিয়াদুল জান্নাহ শুধু একটি স্থাপত্য নয়; এটি ইসলামের ইতিহাস ও আধ্যাত্মিকতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং জান্নাতের প্রতীক হিসেবে অবিস্মরণীয়।

রওজা

মূল নিবন্ধ: সবুজ গম্বুজ
মসজিদে নববী
রওজার বহির্ভাগ

রওজা শরিফ মসজিদে নববীর দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। এটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেখানে তিনজন মহান ব্যক্তিত্বের সমাধি রয়েছে:

  1. হযরত মুহাম্মদ (সঃ)
  2. প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ)
  3. দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রাঃ)

খালি সমাধি:

  • রওজা শরিফের পাশে একটি সমাধি খালি রাখা হয়েছে।
  • ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, হযরত ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে ফিরে আসার পর মৃত্যুবরণ করবেন এবং তাকে এই স্থানে দাফন করা হবে।

সবুজ গম্বুজ:

  • এই পুরো পবিত্র স্থানটি সবুজ গম্বুজের (গম্বুজ আল-খাদরা) নিচে অবস্থিত।
  • ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে, উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ এই গম্বুজ নির্মাণ করেন।
  • ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে, গম্বুজটি প্রথমবারের মতো সবুজ রঙে রাঙানো হয়, যার ফলে এটি “সবুজ গম্বুজ” নামে পরিচিতি লাভ করে।

ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

  • রওজা শরিফ মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ সম্মানের স্থান।
  • মুসলিমদের বিশ্বাস, এখানে প্রার্থনা ও দোয়া কবুল হয়।
  • এটি মসজিদে নববীর আধ্যাত্মিক কেন্দ্র এবং ইসলামের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

রওজা শরিফ শুধুমাত্র একটি সমাধি নয়, এটি মুসলিমদের জন্য গভীর আবেগ, ভালোবাসা এবং বিশ্বাসের প্রতীক। সবুজ গম্বুজের এই স্থান হজ্ব ও ওমরাহর জন্য আগত প্রত্যেক মুসলিমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য।

মিহরাব

মসজিদের তিনটি মিহরাব: ঐতিহ্য ও ইতিহাস

মসজিদে নববীর স্থাপত্যে তিনটি মিহরাব রয়েছে, যা মসজিদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্বকে আরও গভীর করে তুলেছে। মিহরাব হলো ইমামের নামাজের নেতৃত্ব দেওয়ার স্থান এবং এটি কিবলার দিক নির্দেশ করে।

১. মূল মিহরাব (হযরত মুহাম্মাদ সঃ আঃ এর সময় নির্মিত):
  • এটি মসজিদে নববীর সবচেয়ে প্রাচীন মিহরাব।
  • হযরত মুহাম্মাদ (সঃ আঃ) নিজ হাতে এই মিহরাব নির্মাণ করেন।
  • এটি মসজিদের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
  • এই মিহরাবটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন যা ইসলামের প্রাথমিক যুগের স্থাপত্যের উদাহরণ।
২. উমাইয়া খলিফা কর্তৃক নির্মিত মিহরাব:
  • উমাইয়া খলিফা আল-ওয়ালিদ কর্তৃক এই মিহরাব নির্মাণ করা হয়।
  • এটি মসজিদের প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে যুক্ত করা হয়।
  • খলিফার সময় তৈরি এই মিহরাব স্থাপত্যে উমাইয়া শৈলীর প্রভাব বহন করে।
৩. উসমানীয় মিহরাব:
  • উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাসনামলে এই মিহরাব নির্মাণ করা হয়।
  • এটি মসজিদের নকশা ও নান্দনিকতার প্রতি উসমানীয়দের গভীর মনোযোগের পরিচায়ক।
  • মিহরাবটি মার্বেল এবং সুন্দর কারুকাজ দ্বারা সজ্জিত।
মিহরাবগুলোর গুরুত্ব:
  • এই তিনটি মিহরাব ইসলামের বিভিন্ন যুগের প্রতিনিধিত্ব করে।
  • প্রতিটি মিহরাব সেই সময়ের শাসকের ধর্মীয় উদ্যোগ এবং ইসলামের প্রতি তাদের অবদানের প্রতীক।
  • বর্তমানে মুসল্লিরা মূলত উসমানীয় মিহরাব ব্যবহার করে, তবে অন্য মিহরাবগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অক্ষুণ্ণ।

মসজিদে নববীর এই তিনটি মিহরাব ইসলামি স্থাপত্য এবং ইতিহাসের ধারাবাহিকতার উজ্জ্বল নিদর্শন। এগুলো শুধুমাত্র নামাজের স্থান নয়, বরং ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত বিভিন্ন শাসকের অবদানের স্মারক।

মিম্বর

রাসুল (সাঃ) কর্তৃক ব্যবহৃত প্রথম মিম্বরটি খেজুর গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছিল, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়। ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে মিম্বরটির সঙ্গে তিন ধাপ বিশিষ্ট একটি সিঁড়ি যুক্ত করা হয়, এবং খলিফা আবু বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) রাসুল (সাঃ)-এর প্রতি সম্মান দেখিয়ে তৃতীয় ধাপে পা রাখতেন না।

পরে, তৃতীয় খলিফা উসমান (রাঃ) এর সময়ে মিম্বরটির উপরে একটি গম্বুজ বসানো হয় এবং বাকি ধাপগুলো আবলুস কাঠ দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। বাইবার্সের সময় (১৩৯৫ খ্রিষ্টাব্দে) মিম্বরটি সরিয়ে নতুন মিম্বর স্থাপন করা হয়, এবং ১৪১৭ খ্রিষ্টাব্দে শাইখ আল-মাহমুদি নতুন মিম্বর স্থাপন করেন। ১৫শ শতাব্দীর শেষের দিকে কাইতবের সময়ে মার্বেলের মিম্বর স্থাপন করা হয়। এই সমস্ত পরিবর্তন মসজিদের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত, এবং ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে এটি ব্যবহৃত হয়, যা মসজিদের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে।

মিনার

প্রথম মিনারগুলো ২৬ ফুট (৭.৯ মিটার) উচ্চতা বিশিষ্ট ছিল, যা খলিফা উমর (রাঃ)-এর সময়ে নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৩০৭ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ ইবনে কালাউন “বাব আল-সালাম” নামক মিম্বর স্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে চতুর্থ মুহাম্মদ এটি সৌন্দর্য‌মন্ডিত করেন।

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কারের পর মসজিদে মোট মিনারের সংখ্যা দশটি হয়, যার উচ্চতা ১০৪ মিটার (৩৪১ ফুট)। এই মিনারগুলোর নকশা ও গঠন বিভিন্ন অংশে ভিন্ন, যেমন উপরের, নিচের এবং মধ্যম অংশের আকার যথাক্রমে সিলিন্ডার, অষ্টাভুজ এবং বর্গাকার


সাবেক ও বর্তমান ইমাম মুয়াজ্জিনদের তালিকা

সাবেক মুয়াজ্জিন

এই ব্যক্তিরা মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, বিশেষ করে আজান দেওয়ার মাধ্যমে মুসলিমদের নামাজের জন্য ডাকতেন। এসব ব্যক্তির মধ্যে কিছু বিখ্যাত নাম, যেমন:

  • শাইখ হুসাইন আব্দুল গণি বোখারী
  • শাইখ হাসান আব্দুস সাত্তার আশুর বোখারী
  • শাইখ আব্দুল আজিজ বোখারী (৬০ বছর ধরে)
  • শাইখ মাহমুদ নুমান
  • শাইখ আব্দুল মুত্তালিব নজদী
  • শাইখ হুসাইন হামজা আফিফি
  • শাইখ হুসাইন রজব
  • শাইখ আব্দুল মালিক আল নুমান
  • শাইখ কামিল নজদী
  • শাইখ মোস্তফা উসমান নুমান
  • শাইখ মাজিদ হামজা হাকিম

এরা ইসলামের মহান ঐতিহ্যের অংশ এবং তাদের কর্মের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ধর্মীয় পরামর্শ এবং নেতৃত্ব প্রদান করেছেন।

বর্তমান মুয়াজ্জিন

এই মুয়াজ্জিনরা নামাজের জন্য মুসলিমদের ডাকার পাশাপাশি ইসলামিক উপাস্য স্থানে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমান মুয়াজ্জিনদের মধ্যে রয়েছে:

  • শাইখ এসাম বোখারী (প্রধান মুয়াজ্জিন)
  • শাইখ সৌদ বোখারী
  • শাইখ আশরাফ আফিফি
  • শাইখ আহমাদ আনসারী
  • শাইখ আব্দুল রহমান কাশহুকজী
  • শাইখ উমর নাবেল সানবুল
  • শাইখ ইয়াদ শুকরী
  • শাইখ ফয়সাল নোমান
  • শাইখ মাহদী বারী
  • শাইখ মুহাম্মদ বিন মাজিদ হাকিম
  • শাইখ আনাস শরীফ
  • শাইখ উসামা আকদার
  • শাইখ উমর কামাল
  • শাইখ আদিল কাতিব
  • শাইখ আব্দুল মাজিদ শুরাইহী
  • শাইখ হাসান কাশহুকজী
  • শাইখ আব্দুল্লাহ হাত্তাব আল হুনাইনী
  • শাইখ সামি দেওলী
  • শাইখ মুহাম্মদ মারোয়ান কাসাস
  • শাইখ আহমেদ আফিফি

এরা মসজিদে মুয়াজ্জিনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে মুসলিমদের নামাজের জন্য আহ্বান করেন, এবং তাদের এই ভূমিকা মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাবেক ইমাম

সাবেক ইমামদের তালিকা থেকে জানা যায়, তারা মসজিদে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করেছেন, বিশেষ করে নামাজের নেতৃত্ব ও খুতবা প্রদান। কিছু বিখ্যাত সাবেক ইমামদের মধ্যে রয়েছে:

  • আব্দুল্লাহ জাহিম (ইমাম ও খতিব)
  • মুহাম্মদ আইয়ুব (ইমাম ও খতিব)
  • আলী আল সুদাইস (ইমাম ও খতিব)
  • সাদ আল ঘামদি (তারাহবীর অতিথি ইমাম)
  • আব্দুল্লাহ আওয়াদ আল জুহানি (তারাহবীর অতিথি ইমাম)
  • মাহের আল মুয়াই’কলি (তারাহবীর অতিথি ইমাম)

এই ইমামরা শুধুমাত্র নামাজের নেতৃত্ব দেননি, বরং তাদের খুতবা ও ধর্মীয় শিক্ষা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ। আল-সুদাইস এবং আল-ঘামদি, বিশেষভাবে, তাদের কোরআন তিলাওয়াতের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত।

বর্তমান ইমাম

ইমামদের তালিকা থেকে জানা যায়, তারা মসজিদে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করছেন, এবং তাদের ভূমিকা মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান ইমামদের মধ্যে রয়েছে:

  • আবদুর রহমান আস-সুদাইস (দুই পবিত্র মসজিদের জেনারেল সভাপতি ও ইমাম)
  • আলী আবদুর রহমান আল হুজাইফী (প্রধান ইমাম ও খতিব)
  • আব্দুল মহসিন আল কাসিম (ইমাম ও খতিব)
  • আব্দুল বারী আওয়ায আস সুবাইতী (ইমাম ও খতিব)
  • আহমাদ আল হুজাইফী (ইমাম ও খতিব)
  • খালিদ আল মুহান্না (ইমাম ও খতিব)
  • সালেহ আল বুদাইর (ইমাম ও খতিব)
  • আহমেদ তালিব হামিদ (ইমাম ও খতিব)
  • আব্দুল্লাহ বুয়াই’জান (ইমাম ও খতিব)
  • হুসাইন আল শাইখ (ইমাম ও খতিব)
  • আব্দুল্লাহ আল কুরাফী (ইমাম)
  • মুহাম্মদ বারহাজী (ইমাম)

এই ইমামরা মসজিদে নামাজের নেতৃত্ব প্রদান, খুতবা দেওয়া, এবং ইসলামী শিক্ষার প্রচারে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। বিশেষত, আবদুর রহমান আস-সুদাইস একজন প্রখ্যাত ব্যক্তি যিনি মক্কা ও মদিনার পবিত্র মসজিদে ইমাম হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত।


চিত্রশালা
মসজিদে নববী
রাতের দৃশ্য
মসজিদে নববী
ভেতরের দৃশ্য
মসজিদে নববী
বাইরের দৃশ্য

আরও দেখুন

মদিনা সৌদি আরব মানচিত্র
মদিনার ইতিহাস
কুবা মসজিদ ইসলামেরকুবা মসজিদ ইসলামের প্রথম মসজিদের
জিন কী? ইসলামিক বিশ্বাস ও বৈশিষ্ট্য"জিন কী? ইসলামিক বিশ্বাস ও বৈশিষ্ট্য
জিহাদের ময়দানে শহীদনববধূর ত্যাগ: সাহাবির জিহাদে শহীদ হওয়ার অনন্য উদাহরণ